২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |
  • প্রচ্ছদ
  • রাজনীতি >> শিক্ষা
  • ঢাবিতে মৌলবাদী গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের প্রতিবাদ
  • ঢাবিতে মৌলবাদী গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের প্রতিবাদ

    মুক্তি কন্ঠ

    মুক্তিকন্ঠ ডেস্ক :

    ঢাবিসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী অপশক্তির ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন স্বাক্ষরিত এক লিখিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আজ (২২ মার্চ, শুক্রবার) এই প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।


    লিখিত প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়েছে যে, “মহান মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার, মুক্তবুদ্ধি ও সংস্কৃতি চর্চার প্রাণকেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী অপশক্তির ধর্মভিত্তিক রাজনীতি স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠীর এধরণের ন্যাক্কারজনক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। প্রতিবছর রমজান মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতারকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মাঝে এক ধরনের উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। বিভিন্ন বিভাগ, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সংগঠন ও টিএসসি ভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠন কর্তৃক ইফতারের আয়োজন আমাদের মাঝে আনন্দ, সম্প্রীতি এবং অসাম্প্রদায়িকতার প্রতীক হিসেবে কাজ করে। এবারো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল স্থানে শিক্ষার্থীরা প্রতিবারের ন্যায় সুষ্ঠুভাবে ইফতার আয়োজন করছে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে একটি স্বার্থন্বেষী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ইফতারকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে নিষিদ্ধ ঘোষিত সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রশিবিরের সদস্যরা বিভিন্ন নামে বেনামে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য ধর্মীয় মোড়কে বহিরাগত শিবির ক্যাডারদের সাথে নিয়ে গণ ইফতারের মতো অস্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করছে যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী। দেশের প্রচলিত আইন ও সংবিধান পরিপন্থী। প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীরা উৎসবমুখর পরিবেশে ইফতার আয়োজন করে থাকে যেখানে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলের অংশগ্রহণ থাকে যা নষ্ট করার জন্য সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী অপশক্তি গভীর ষড়যন্ত্র করছে। নিজেদের রাজনৈতিক এজেণ্ডা বাস্তবায়নের জন্য স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি জামাত-শিবির ধর্মকে পুঁজি করে ঢাবিসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য পরিবেশ ধ্বংস করার গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। এরা সবসময় ধর্মকে রাজনীতিতে অপব্যবহার করে নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করে। ধর্মচর্চার নির্ধারিত জায়গা হলগুলোর মসজিদে ধর্মচর্চা না করে ভিন্ন উদ্দেশ্যে ঢাবি ক্যাম্পাসে সংস্কৃতি চর্চার জায়গাগুলোতে ধর্মীয় মোড়কে রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালিত করার চেষ্টা করছে। রগকাটা জঙ্গি সংগঠন জামাত-শিবির ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার জন্য এখন ধর্মকে পুঁজি করে একত্রিত হওয়ার চেষ্টা করছে। যারা ধর্মকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে তারা প্রকৃতপক্ষে ইসলামের শত্রু। প্রকৃত মুসলমানরা কখনোই ধর্মকে ব্যবহার করে অপরাজনীতির চর্চা করে না। এসব ধর্ম ব্যবসায়ীদের কারণে ইসলাম ধর্মের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক মাফিয়াতন্ত্রের কুশিলবদের দেখা যায় যে, তারা সব সময় ধর্মের দোহাই দিয়ে সরলমনা মানুষকে ধর্মের কথা বলে ব্ল্যাকমেইল (জিম্মি) করে রাজনৈতিকভাবে শোষণ করতে তৎপর। এদিকে ধর্মবিশ্বাসের মত সংবেদনশীল বিষয়কে এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনগোষ্ঠী এড়িয়েও যেতে পারেন না! যার বাস্তব উদাহরণ পবিত্র সিয়াম সাধনার মাস রমজান মাসের অন্যতম ধর্মীয় অনুষঙ্গ ইফতারকে রাজনীতির হাতিয়ার বানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে দেশের আইনশৃঙখলা বিনষ্টের পাঁয়তারা করছে একাত্তরের পরাজিত স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি।”

    লিখিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরোও বলা হয়েছে যে,
    “১৯৭১ সালে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বাঙালির স্বাধীনতার চেতনাকে দমাতে না পেরে ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে নিরস্ত্র বাঙালি জাতির উপর গণহত্যা চালিয়েছিলো। আর সাম্প্রতিককালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ সারাদেশে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার পাঁয়তারা করছে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারের প্রেতাত্মা। দীর্ঘদিন ধরে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে থাকায় তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ বাস্তবায়নের জন্য অরাজনৈতিক মোড়কে আবির্ভূত হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক কর্মসূচী দিয়ে ব্যর্থ হয়ে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারের প্রেতাত্মারা পুরাতন কূটকৌশল হিসেবে পবিত্র ইফতারকে নিজেদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ফায়দালাভের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা আদর্শিকভাবে দেউলিয়া পাকিস্তানের লেজুড়বৃত্তির লক্ষ্যে সেনাছাউনিতে সৃষ্টি হওয়া স্বাধীন বাঙালি জাতিকে শাসন ও শোষণের উদ্দেশ্যে সৃষ্ট রাজনৈতিক দল বিএনপি স্বাধীনতা বিরোধী দল জামায়াত-শিবিরের ছত্রছায়ায় পঙ্গপালের ন্যায় ক্রমাগত সংখ্যায় ফুলেফেঁপে উঠছে। তাদের এই মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়েছে কতিপয় নব্য হাইব্রিড আওয়ামী লীগের ব্যক্তিগত পেশীবলয় সৃষ্টির সহায়ক অনুষঙ্গ হিসেবে। এক্ষেত্রে অবশ্য মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বর্তমান শাসক দল আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক রাষ্ট্রের সর্বস্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না করার সীমাবদ্ধতা বা উদাসীনতাকেও এড়িয়ে যাওয়া যায়না। বীর বাঙালির গর্বিত উত্তরাধিকার হিসেবে বাংলাদেশের নবতারুণ্যকে একটি প্রগতিশীল, উন্নত, অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শপথগ্রহণ করতে হবে। শেকড়সন্ধানী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তারুণ্যের মন ও মগজে ধারণ করতে হবে বাঙ্গালি সংস্কৃতি যেমন আউল বাউল লালনের দেশ, জারি, সারি, মুর্শিদী ও ভাটিয়ালি গানের দেশ ,বারো মাসে তেরো পার্বণের দেশ, ষড়ঋতুর দেশ, লাখো শহীদের রক্তস্নাত শ্যামল প্রকৃতির লীলাভূমি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে। জাতীয় ঐক্য ও মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে দলমত নির্বিশেষে আমাদের সকলের প্রাণে মনে সদা জাগ্রত রাখতে হবে। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চিরন্তন নির্দেশনা, লাখো শহীদের আত্মত্যাগে অর্জিত মহান স্বাধীনতার চেতনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শংকর রায়কে বলেছিলেন ,‘আমি বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার একটা বীজ পুঁতে রেখে গেলাম।’ কোনো বাধা, মিথ্যা প্রচার ও সমালোচনা বঙ্গবন্ধুকে এই লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭২ সালে দেশবাসীকে তিনি যে সংবিধান দেন, তা ছিল দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান। ১৯৭২-এ বঙ্গবন্ধুর নেতৃৃত্বে প্রণীত সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা সম্পর্কে বলা হয়েছে এভাবে ‘ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বাস্তবায়নের জন্য (ক) সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতা, (খ) রাষ্ট্র কর্তৃক কোনো ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান, (গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অপব্যবহার (ঘ) কোনো বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তাহার ওপর নিপীড়ন, বিলোপ করা হইবে।’ ওই সংবিধান গ্রহণের সময় সংসদে দেওয়া তার বক্তৃতায় তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘পবিত্র ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা চলবে না।’ সম্প্রতি গণ ইফতারের নামে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী অপশক্তি জামাত-শিবির নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যানারে সুকৌশলে অস্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে ঢাবিসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অস্থিতিশীল করার গভীর ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এধরণের রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা মনে করি, শান্তিপূর্ণ ক্যাম্পাসে অস্থিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য একটি মহল গভীর ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী অপশক্তি জামাত-শিবিরের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধের মঞ্চের দাবি, গণ-ইফতারের নামে ঢাবিসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নাশকতা ও অস্থিতিশীল করার সাথে জড়িতদেরকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। অবিলম্বে ঢাবিসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। ধর্মভিত্তিক সংগঠনের রাজনীতির নামে ধর্মের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। প্রশাসনকে আরোও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় ঢাবিসহ দেশব্যাপী সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।”