২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |
  • প্রচ্ছদ
  • জাতীয় >> রাজনীতি >> শিক্ষা
  • সংবিধান ও মানবতা বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত আসিফ মাহতাবকে গ্রেফতারের দাবিতে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের প্রতিবাদ সমাবেশ:
  • সংবিধান ও মানবতা বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত আসিফ মাহতাবকে গ্রেফতারের দাবিতে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের প্রতিবাদ সমাবেশ:

    মুক্তি কন্ঠ

    মুক্তিকন্ঠ ডেস্ক :

    সংবিধান ও মানবতা বিরোধী কর্মকাণ্ডের অপরাধে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরীচ্যুত শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আজ ২৪ জানুয়ারী বুধবার শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচী পালন করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন এর সঞ্চালনায় উক্ত কর্মসূচীতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। আরোও বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত মাননীয় বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন, সংগঠনের উপদেষ্টা ভাস্কর্য শিল্পী রাশা, দপ্তর সম্পাদক মুহাম্মদ নূর আলম সরদারসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

    মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, “পরিকল্পিত ভাবে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্যে পাঠ্যপুস্তক নিয়ে গুজব ও অপব্যাখ্যা ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার পাশাপাশি মানবতাবিরোধী বক্তব্য দেয়ার অপরাধে জামাতি এজেন্ট পশ্চিমা ইহুদিদের দালাল আসিফ মাহতাবকে অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সংবিধান লঙ্ঘন করার অপরাধে আসিফ মাহতাব ও মহিউদ্দিন রনিকে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় অভিযুক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। ধর্মীয় উসকানি দেয়ার জন্য প্রকাশ্য দিবালোকে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক ছিঁড়ে ফেলে তৃতীয় লিঙ্গের হিজড়া জনগোষ্ঠীকে কটাক্ষ ও অবমাননা করার মাধ্যমে আসিফ মাহতাব ও মহিউদ্দিন রনি জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদ ও বাংলাদেশের সংবিধান পরিপন্থী কর্মকাণ্ড সংঘটিত করেছেন। এর আগেও এই ধর্ম ব্যবসায়ী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেয়ার হুমকি দিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করেছিল। এরা আবার দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। সরকারের নিকট দাবি, আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে আসিফ মাহতাব ও মহিউদ্দিন রনিকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি দেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।”

    সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, “স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার আলবদরদের দোসর আসিফ মাহতাব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে পাঠ্যপুস্তক ছিঁড়ে দেশের সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ করেছেন। তার কোন আপত্তি থাকলে সেটি লিখিত আকারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বা সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমে উপস্থাপন করতে পারতেন। সেটি না করে ধর্মীয় উগ্রবাদ ছড়ানোর উদ্দেশ্যে এধরণের মানবতা বিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছেন যা কখনোই এদেশের জনগণ মেনে নিবে না। সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী অপশক্তির এজেণ্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য সে এধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন। আসিফ মাহতাব ছাত্রজীবনে জঙ্গি সংগঠন শিবির ও হিযবুত তাহরীর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। অবিলম্বে তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরোও অনেক রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের তথ্য জাতির সামনে উন্মোচিত হবে। আসিফ মাহতাবের মতো মহিউদ্দিন রনিও পাঠ্যপুস্তক ছিঁড়ে রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধ করেছেন। এদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। অন্যথায় এসব ধর্ম ব্যবসায়ীদেরকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই গণধোলাই দিবে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।”

    সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, “জামাত-শিবিরের এজেন্ট আসিফ মাহতাবকে চাকুরীচ্যুত করার সিদ্ধান্ত যৌক্তিক। কারণ সে সংবিধান লঙ্ঘন করে ধর্মীয় উগ্রবাদ ছড়িয়ে মৌলবাদী গোষ্ঠীর এজেণ্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছে। রাষ্ট্রের উচিত ছিল অনেক আগেই আসিফ মাহতাব ও মহিউদ্দিন রনিকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। কারণ এরা দেশ ও জাতির শত্রু। এই দেশবিরোধী অপশক্তি শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে পাঠ্যপুস্তকের লেখাকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন ও অপব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে যা আইনের দৃষ্টিতে সুস্পষ্ট অপরাধ। তৃতীয় লিঙ্গের হিজড়া জনগোষ্ঠী আমাদের মতো মানুষ। তারা কেউ আপনার আমার ভাই বোন। কোন মানুষকে ছোট করে দেখা ইসলাম কখনোই সমর্থন করে না। ধর্ম ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে। অবিলম্বে এসব ধর্ম ব্যবসায়ীদেরকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।”

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, “আসিফ মাহতাব পাঠ্যপুস্তকের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করেছেন। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর এজেণ্ডা বাস্তবায়নের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবিষয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। রাজপথের পাশাপাশি অনলাইনে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে আরোও বেশী সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশের সংবিধানে সুস্পষ্ট ভাবে সকল লিঙ্গের মানুষের সমান অধিকারের কথা বলে হয়েছে। জেণ্ডার বৈষম্য করা দেশের সংবিধান পরিপন্থী। ইসলাম ধর্মের নীতি অনুযায়ী সকল মানুষকে সমান চোখে দেখতে হবে। কাউকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। ধর্মের দোহাই দিয়ে তৃতীয় লিঙ্গের হিজড়া জনগোষ্ঠীকে কটাক্ষ করার মাধ্যমে আসিফ মাহতাব মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছেন। তার প্রকৃত উদ্দেশ্য ইতিমধ্যে জাতির সামনে উন্মোচিত হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকের কোথাও ধর্ম বিরোধী ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। আসিফ মাহতাব উদ্দেশ্যে প্রণোদিত ভাবে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে দেশে অশান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতেও এই মৌলবাদী অপশক্তি আবার পরাজিত হবে। কারণ এই দেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বাংলাদেশ। এই দেশ জাতীয় কবি নজরুল, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ, সুফিয়া কামাল, বেগম রোকেয়া ও জীবনানন্দের বাংলাদেশ। সাম্প্রদায়িক অপশক্তি জনগণের নিকট পরাজিত হয়ে বারবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠার চেষ্টা করবে। এদেরকে সবসময় রুখে দেয়ার জন্য অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতেও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।”

    বিশিষ্ট ভাস্কর্য শিল্পী রাশা বলেন, “সুদূর অতীত থেকেই ধর্মের অপব্যাখ্যা, অপব্যাবহারকারীরা বিজ্ঞান শিক্ষার বিরোধীতা করে মুসলমানদের বিজ্ঞান ও যুক্তির পথ থেকে সরিয়ে অন্ধ ও কূপমুন্ডক বানানোর অপ্রয়াস চালিয়ে আসছে। আসিফ মাহতাব ও মহিউদ্দিন রনিরা ধর্ম ব্যবসায়ের প্রধান প্রতিবন্ধক প্রধান শত্রু হিসাবে বিজ্ঞান শিক্ষা ও যুক্তিকে প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে আসছে। বাংলাদেশের তথাকথিত ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলিও তাদের ধর্মভিত্তিক অপরাজনীতি টিকিয়ে রাখার জন্য বরাবরই বিজ্ঞান ও যুক্তির বিরোধীতার পাশাপাশি সকর ধরনের জ্ঞান—বিজ্ঞান—সভ্যতা—মানবতা—মনুষত্বের বিরোধিতা করে আসছে। এরা ধর্মের নামেই বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি, বাঙালির আত্মপরিচয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছে এবং পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সাথে যুক্ত হয়ে ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতির উপর ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা—যুদ্ধাপরাধ—মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠিত করেছিল। তারা এই উগ্রবাদী, জঙ্গিবাদী, ধর্মান্ধ রাজনৈতিক ধারার বিরুদ্ধে শুভবুদ্ধি সম্পন্ন সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”