২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |
  • প্রচ্ছদ
  • রাজনীতি >> শিক্ষা
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িক মাফিয়াতন্ত্র ও রাজনৈতিক বাস্তবতা
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িক মাফিয়াতন্ত্র ও রাজনৈতিক বাস্তবতা

    মুক্তি কন্ঠ

    মুক্তিকন্ঠ ডেস্ক :

    ‘আমি তাকে এমন একটি প্রস্তাব দেবো যে, সে তা প্রত্যাখ্যান করতে পারবেনা!’’(১) প্রখ্যাত মার্কিন সাহিত্যিক মারিও পুজো’র ‘গডফাদার’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মাফিয়া ডন ভিটো কর্লিয়নির বিখ্যাত সংলাপ।
    একইভাবে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক মাফিয়াতন্ত্রের কুশিলবদের দেখা যায় যে, তারা সব সময় ধর্মের দোহাই দিয়ে সরলমনা মানুষকে ধর্মের কথা বলে ব্ল্যাকমেইল(জিম্মি) করে রাজনৈতিকভাবে শোষণ করতে তৎপর। এদিকে ধর্মবিশ্বাসের মত সংবেদনশীল বিষয়কে এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনগোষ্ঠী এড়িয়েও যেতে পারেন না! যার বাস্তব উদাহরণ পবিত্র সিয়াম সাধনার মাস রমজান মাসের অন্যতম ধর্মীয় অনুষঙ্গ ইফতারকে রাজনীতির হাতিয়ার বানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে দেশের আইন শৃঙখলা বিনষ্টের পায়তারা করছে একাত্তরের পরাজিত স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি।১৯৭১ সালে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বাঙালির স্বাধীনতার চেতনাকে দমাতে না পেরে ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে নিরস্ত্র বাঙালি জাতির উপর গণহত্যা চালিয়েছিলো। আর সাম্প্রতিককালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সহ সারাদেশে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার পায়তারা করছে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারের প্রেতাত্মা। দীর্ঘদিন ধরে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে থাকায় তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ বাস্তবায়নের জন্য অরাজনৈতিক মোড়কে আবির্ভূত হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক কর্ম্পসূচী দিয়ে ব্যর্থ হয়ে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারের প্রেতাত্মা পুরাতন কূটকৌশল হিসেবে পবিত্র ইফতারকে নিজেদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ফায়দালাভের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা আদর্শিকভাবে দেউলিয়া পাকিস্তানের লেজুড়বৃত্তির লক্ষ্যে সেনাছাউনিতে সৃষ্টি হওয়া স্বাধীন বাঙালি জাতিকে শাসন ও শোষণের উদ্দেশ্যে সৃষ্ট রাজনৈতিক দল বিএনপি;স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতে ইসলামের ছত্রছায়ায় পঙ্গপালের ন্যায় ক্রমাগত সংখ্যায় ফুলেফেপে উঠছে। তাদের এই মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়েছে নব্য হাইব্রিড আওয়ামী লীগের ব্যক্তিগত পেশিবলয় সৃষ্টির সহায়ক অনুষঙ্গ হিসেবে। এক্ষেত্রে অবশ্য মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বর্তমান শাসক দল আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক রাষ্ট্রের সর্বস্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না করার সীমাবদ্ধতা বা উদাসীনতাকেও এড়িয়ে যাওয়া যায়না।

    প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ শাসকদের ষড়যন্ত্রে সংঘটিত উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রসঙ্গে বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক শাদাত হাসান মান্টো লিখেছেন, ‘‘এটা বলোনা যে ১ লাখ হিন্দু ও ১ লাখ মুসলমান মরেছে; বরং বলো ২ লাখ মানুষ মরেছে! আর এটা অত বড় ট্রাজেডিও নয় যে ২ লাখ মানুষ মরেছে! আসল ট্রাজেডি হলো এই যে, ঐ মারাপড়া মানুষদের কেউ-ই কারো(হিন্দু ধর্ম কিংবা ইসলাম ধর্ম) খাতায় সংযোজিত বা বিয়োজিত হয়নি ! ১ লাখ হিন্দুকে মেরে মুসলমানরা হয়তো ভেবেছিল হিন্দু ধর্ম মরে গেছে!কিন্তু তা এখনোও টিকে আছে এবং ভবিষ্যতেও টিকে থাকবে। অন্যদিকে,১লাখ মুসলমানকে মেরে হিন্দুরা হয়তো এটা ভেবে বগল বাজিয়েছিলো যে, ইসলাম ধর্ম শেষ হয়ে গেছে! তবে বাস্তবতা হলো এই যে, তাতে ইসলামের গায়ে কোন রকম আচর-ও লাগেনি। সেইসব লোক তো মুর্খ যারা মনে করে যে, বন্দুক দিয়ে ধর্মকে শিকার করা যায়! ধর্ম, বিশ্বাস এসব চিরন্তন বিষয়গুলো মানুষের শরীরে নয় আত্মায় থাকে। ছুরি, চাকু;আর, বন্দুক দিয়ে তা ধ্বংস করা যায়না।’’(২)

    বীর বাঙালির গর্বিত উত্তরাধিকার হিসেবে বাংলাদেশের নবতারুণ্যকে একটি প্রগতিশীল,উন্নত, অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শপথগ্রহণ করতে হবে।

    শেকড়সন্ধানী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তারুণ্যের মন ও মগজে ধারণ করতে হবে আউল বাউল লালনের দেশ, জারি, সারি, মুর্শিদী ও ভাটিয়ালি গানের দেশ ,বারো মাসে তেরো পার্বণের দেশ, ষড়ঋতুর দেশ, লাখো শহীদের রক্তস্নাত শ্যামল প্রকৃতির লীলাভূমি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে।
    জাতীয় ঐক্য ও মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে দলমত নির্বিশেষে আমাদের সকলের প্রাণে মনে সদা জাগ্রত রাখতে হবে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চিরন্তন নির্দেশনা, লাখো শহীদের আত্মত্যাগে অর্জিত মহান স্বাধীনতার চেতনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শংকর রায়কে বলেছিলেন ,‘আমি বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার একটা বীজ পুঁতে রেখে গেলাম।’ কোনো বাধা, মিথ্যা প্রচার ও সমালোচনা বঙ্গবন্ধুকে এই লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭২ সালে দেশবাসীকে তিনি যে সংবিধান দেন, তা ছিল দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান। ১৯৭২-এ বঙ্গবন্ধুর নেতৃৃত্বে প্রণীত সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা সম্পর্কে বলা হয়েছে এভাবে ‘ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বাস্তবায়নের জন্য (ক) সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতা, (খ) রাষ্ট্র কর্তৃক কোনো ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান, (গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অপব্যবহার (ঘ) কোনো বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তাহার ওপর নিপীড়ন, বিলোপ করা হইবে।’ ওই সংবিধান গ্রহণের সময় সংসদে দেওয়া তার বক্তৃতায় তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘পবিত্র ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা চলবে না।’

    লেখক: কবি ইয়াসির আরাফাত তূর্য,
    সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।

    রেফারেন্সসমূহ:
    (১)গডফাদার, মারিও পুজো,
    (২) সাহায়, শাদাত হোসেন মান্টো