২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |
  • প্রচ্ছদ
  • আর্ন্তজাতিক >> সারাদেশ
  • ঘুলজা গণহত্যা দিবসে চীনের উইঘুর মুসলিম নির্যাতন বন্ধের দাবিতে শাহবাগে মানববন্ধন ও সমাবেশ:
  • ঘুলজা গণহত্যা দিবসে চীনের উইঘুর মুসলিম নির্যাতন বন্ধের দাবিতে শাহবাগে মানববন্ধন ও সমাবেশ:

    মুক্তি কন্ঠ

    মুক্তিকন্ঠ ডেস্ক :

    ৫ ফেব্রুয়ারী নভেম্বর ঘুলজা গণহত্যা দিবস উপলক্ষে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম নির্যাতনের প্রতিবাদে আজ ৫ ফেব্রুয়ারী সোমবার বিকাল ৩টায় টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচী পালন করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন এর সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচীতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। আরোও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা বিশিষ্ট ভাস্কর্য শিল্পী রাশা, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ্যাড. এইউজেড প্রিন্স, দপ্তর সম্পাদক মুহাম্মদ নূর আলম সরদারসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

    মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের বক্তব্যে সংগঠন সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, “আজ সেই ভয়াল ৫ ফেব্রুয়ারী। চীনের উইঘুর মুসলিম ঘুলজা গণহত্যা দিবস। বিশ্বজুড়ে উইঘুরেরা প্রতি বছর ৫ ফেব্রুয়ারিকে ঘুলজা গণহত্যার বার্ষিকী হিসেবে পালন করে। ১৯৯৭ সালের এই দিনে, চীনা বাহিনী ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা এবং সমান অধিকারের দাবিতে জিনজিয়াং উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার সময় হাজার হাজার নিরীহ উইঘুরদের হত্যা ও বন্দী করে। বিক্ষোভকারীরা উইঘুর সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক প্রান্তিকতার দিকে পরিচালিত জাতিগত বৈষম্যের অবসানের দাবি জানায়। বিভিন্ন এনজিও এবং সুশীল সমাজ, ওলামা এবং অন্যান্য সংগঠন বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কর্মসূচির মাধ্যমে চীনের এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে থেকে উইঘুর মুসলিম ও অন্যান্য জাতিগত সংখ্যালঘুদের ন্যায্য দাবিকে সমর্থন করার জন্য ঘুলজা গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও সংগ্রামের পাশাপাশি সকল শ্রেণির মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ সবসময় মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। বিশ্বের সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা প্রত্যেকটি মানুষের নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি। সমগ্র পৃথিবী একটি পরিবার। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় প্রত্যেকটি দেশের নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু সম্প্রতি চীন সরকারের সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ডে আমরা মারাত্নকভাবে উদ্বিগ্ন। ১৯৩৩ সালে স্বল্প সময়ের জন্য পূর্ব তুর্কিস্তান নামে স্বাধীন দেশ পেয়েছিল উইঘুররা। পরে তা চীন দখল করে নিয়ে স্বাধীনতাকামী উইঘুরদের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন শুরু করে যা এখনো চলমান। জাতিসংঘের দাবি অনুযায়ী, চীনের বন্দিশালায় বর্তমানে নারীসহ ১০ লাখ উইঘুর মুসলমান আটক আছেন। চীনে নির্যাতনের শিকার সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমরা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্য চেয়েছেন। মুক্তিকামী উইঘুর সংখ্যালঘুদের যৌক্তিক আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাষ্ট্র চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু উইঘুর নির্যাতন বন্ধের দাবিতে আমরা দীর্ঘদিন যাবত আন্দোলন করে যাচ্ছি। চীনের শিনজিয়াং প্রদেশে বসবাসরত প্রায় ১ কোটি ২৬ লক্ষ মুসলমানদের ওপর অমানবিক ভাবে নির্যাতন ও নিপীড়ন চালানো হচ্ছে যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। মুসলিমদের সংখ্যা কমানোর জন্য মুসলিম নারীদের জোর পূর্বক গর্ভপাত করানো, জোরপূর্বক জন্মনিয়ন্ত্রণ ঔষধ খাওয়ানো, ধর্মান্তরিত করা, ধর্ষণ, বন্দী শিবিরে আটকে রেখে নির্যাতন করা ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে চীন সরকার প্রতিনিয়ত সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় জাতিসংঘ সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর কোন জোরালো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। চায়না কোম্পানীগুলো বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে ধীরগতি, দুর্নীতি, অনিয়ম ও শ্রমিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। এগুলো বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনে তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে। জনগণের স্বার্থ বিরোধী তিস্তা প্রকল্পের নামে চীনের নতুন আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে। চীন আবার বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কা বানানোর ষড়যন্ত্র মেতে উঠেছে। তিস্তা পাড়ের মানুষদের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য অন্য দাতা সংস্থার সহযোগিতা নিতে হবে। চীনের বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে জড়িতদের মুখোশ উন্মোচন করা হবে। শুধুমাত্র নিজের দেশে নয়, চীন বাংলাদেশেও উন্নয়ন প্রকল্পের নামে একের পর এক আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। চায়না কোম্পানীগুলো বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে ধীরগতি, দুর্নীতি, অনিয়ম ও শ্রমিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। বারবার প্রকল্পের মেয়াদ ও আর্থিক ব্যয় বাড়িয়ে দিয়ে চায়না কোম্পানিগুলো জনগণের কষ্টার্জিত ট্যাক্সের টাকা লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি চীন তিস্তা প্রকল্পের নামে ঋণের জালে ফেলে এবার বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কা বানানোর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। চীন আবার উত্তরবঙ্গের মানুষের রক্ত চুষে খাওয়ার চেষ্টা চলছে। উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংস ও জনগণকে জিম্মি করে নিজেদের অসৎ এজেণ্ডা বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তিস্তা নদীর আশে পাশে অঘোষিত সামরিক ঘাঁটি বানিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা হচ্ছে। অবিলম্বে চীনের অর্থায়নে তিস্তা প্রকল্প বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে এডিবি, জাইকা, আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের অর্থায়নে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। চীনের বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র ও উন্নয়ন প্রকল্পের নামে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। পাশাপাশি ১২ নভেম্বর পূর্ব তুর্কিস্তানের স্বাধীনতা দিবসকে স্বীকৃতি প্রদানের দাবি জানাচ্ছি। ১৯৩৩ সালে স্বল্প সময়ের জন্য পূর্ব তুর্কিস্তান নামে স্বাধীন দেশ পেয়েছিল উইঘুররা। পরে তা চীন দখল করে নিয়ে স্বাধীনতাকামী উইঘুরদের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন শুরু করে যা এখনো চলছে। জাতিসংঘের দাবি অনুযায়ী, চীনের বন্দিশালায় বর্তমানে নারীসহ ১০ লাখ উইঘুর মুসলমান আটক আছেন। চীনে নির্যাতনের শিকার সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমরা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্য চেয়েছেন। বিশ্বের শোষিত এবং নিপীড়িত মানুষের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, “বিশ্বের বহু অংশে এখনো অবিচার ও নিপীড়ন চলিতেছে। দুনিয়ার যেখানেই মজলুম মানুষ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবে, আমরা নিশ্চয়ই তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াবো।” বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শ অনুযায়ী বিশ্বের প্রতিটি নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের পক্ষে কথা বলবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।মুক্তিকামী উইঘুর সংখ্যালঘুদের যৌক্তিক আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাষ্ট্র চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু উইঘুর নির্যাতন বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।”

    সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, “একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী অপশক্তি চীন বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সাথে জড়িত ছিল। বিএনপি-জামাতের শাসনামলে ১৫ আগস্টে খালেদা জিয়াকে জন্মদিন উপহার পাঠানো রাষ্ট্র চীন কর্তৃক সম্প্রতি তিস্তা প্রকল্পের নামে অসম শর্তে ঋণের ফাঁদে ফেলে এবার বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কা বানানোর ষড়যন্ত্রের লিপ্ত হয়েছে। ঢাকা টু কুড়িগ্রাম ছয় লেনের মহাসড়ক প্রকল্পে চীনা কোম্পানির ধীরগতি কৌশলের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে দুর্নীতি ও অনিয়ম করে যাচ্ছে। চট্টগ্রামে চীনা কোম্পানি কর্তৃক শ্রমিক হত্যা ও নির্যাতনের বিচার করতে হবে।
    প্রায় দুই দশক ধরে শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তারকারী রাজাপক্ষে পরিবারকে বেইজিংয়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র মনে করা হতো। যখন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপক্ষে ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন, তখন চীনের অর্থায়নে বেশ কয়েকটি অবকাঠামো প্রকল্প গড়ে তোলা হয় দেশটিতে। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে হাম্বানটোটার গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ। বিতর্কিত ঋণের অংশ হিসেবে ৯৯ বছরের চুক্তির অধীনে একটি চীনা রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে সমুদ্রবন্দরটি ইজারা দেওয়া হয়েছিল। চীন অসম ঋণের জালে ফেলে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন তিস্তা প্রকল্পের নামে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে চীন। দেশবিরোধী অপশক্তিদের সহযোগিতা নিয়ে চীন একের পর এক আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। খুব শীঘ্রই চীনের দোসরদের মুখোশ উন্মোচন করবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। বাংলাদেশে কর্মরত চীনা কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত শ্রমিক নির্যাতন, বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যাচ্ছে। মনে হয় দেখার কেউ নেই। উত্তরায় গার্ডার পড়ে একই পরিবারের ৫ জন নিহত হওয়ার পরেও চীনা কোম্পানী বিরুদ্ধে এখনো কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে পরিকল্পিতভাবে ধীরগতি দেখিয়ে বাংলাদেশের জনগণের কষ্টার্জিত হাজার হাজার কোটি লুটপাট করে চীনে নিয়ে যাচ্ছে চায়না কোম্পানিগুলো। এদেরকে দ্রুত জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। উন্নয়ন কাজের নামে আগ্রাসন ও শ্রমিক নির্যাতন মেনে নিবে না এদেশের জনগণ।বিশ্বজুড়ে উইঘুরেরা প্রতি বছর ৫ ফেব্রুয়ারিকে ঘুলজা গণহত্যার বার্ষিকী হিসেবে পালন করে। ১৯৯৭ সালের এই দিনে, চীনা বাহিনী ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা এবং সমান অধিকারের দাবিতে জিনজিয়াং উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার সময় হাজার হাজার নিরীহ উইঘুরদের হত্যা ও বন্দী করা হয়েছে। অবিলম্বে উইঘুর মুসলিম নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।”

    সংগঠনের দপ্তর সমন্বয়ক মুহাম্মদ নূর আলম সরদার বলেন, “বাংলাদেশে কর্মরত চীনা কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত শ্রমিক নির্যাতন, বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করছে। চীন কখনো বাংলাদেশের বন্ধু ছিল না, কখনোও বন্ধু হবেও না। সম্প্রতি তিস্তা প্রকল্পের নামে আবার উত্তরাঞ্চলে অঘোষিত সামরিক ঘাঁটি বানিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে। তিস্তা নদীর উন্নয়ন নিজের দেশের অর্থায়নে না করতে পারলেও আরোও দাতা সংস্থা আছে। তাদের নিকট সহযোগিতা নিয়ে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে শ্রীলঙ্কা বানানোর ষড়যন্ত্র এদেশের জনগণ কখনোই মেনে নিবে না।”

    সংগঠনের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ্যাড. এইউজেড প্রিন্স বলেন, “চীন তিস্তা প্রকল্পসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের নামে অসম শর্তের ঋণের জালে ফেলে বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কা বানানোর ষড়যন্ত্র করলে আমরা চুপ থাকতে পারি না। এদেশের কিছু আমলা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ চীনকে বেশী আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে যা দেশের জন্য ক্ষতিকর। এগুলো বন্ধ করতে হবে।সম্প্রতি চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে মুসলিমদের মসজিদ ভেঙ্গে পাবলিক টয়লেট বানানো হয়েছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক। কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া কখনোই উচিত নয়। প্রত্যেক মানুষ তাদের ধর্ম স্বাধীন ভাবে পালন করার অধিকার রাখেন। কিন্তু চীন সরকারের সাম্প্রতিক উইঘুর মুসলিম নির্যাতনের কর্মকাণ্ডই প্রমাণ করে তারা কখনোই অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাস করে না। চীন সরকার সংখ্যালঘু মুসলিমদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতায় প্রতিনিয়ত নগ্ন হস্তক্ষেপ করছে যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।এশিয়া সিআইএর ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্ট বুক অনুযায়ী চীনের মোট জনসংখ্যার ১ থেকে ২ শতাংশ মুসলিম। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রতিবেদনে দেখা যায়, মুসলিমরা চীনা জনসংখ্যার ১ দশমিক ৫ শতাংশ। জিনজিয়াং প্রদেশের জনসংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখের মতো। এর মধ্যে মুসলমান প্রায় ১ কোটি ২৬ লাখ। প্রায় ৫৮ শতাংশ মুসলিম। ফ্রিডম ওয়াচের মতে, চীন হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম ধর্মীয় নিপীড়ক দেশ। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা না থাকায় এসব নিপীড়নের গোঙানির শব্দ বিশ্ববাসী খুব একটা জানতে পারে না। কালেভদ্রে কিছু জানা যায়। উইঘুর মুসলমানদের বিরুদ্ধে বর্বরোচিত নীতির ব্যাপারে চীন বলে যে, বিচ্ছিন্নতাবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও ধর্মীয় চরমপন্থার মোকাবেলা করার জন্যই তারা নানান পলিসি নিতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু দাড়ি রাখা, রমজান মাসে রোজা রাখা কীভাবে ধর্মীয় চরমপন্থা, তা বিশ্ববাসীকে তারা বোঝাতে পারে না। আসলে ধর্মীয় অনুষ্ঠান তাদের মতে চরমপন্থা। আর এই চরমপন্থা দমনের নামে নির্বিচারে গ্রেপ্তার, জেল-জরিমানা চলছে। উইঘুর মুসলমানদের ওপর নিপীড়নের বিরুদ্ধে সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবীরা কথা বলতে পারেন না, কারণ সরকারের চাপে তাদেরকে ‘বোবা’ হয়ে থাকতে হয়।বিক্ষোভকারীরা উইঘুর সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক প্রান্তিকতার দিকে পরিচালিত জাতিগত বৈষম্যের অবসানের দাবি জানায়। বিভিন্ন এনজিও এবং সুশীল সমাজ, ওলামা এবং অন্যান্য সংগঠন বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কর্মসূচির মাধ্যমে চীনের এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে থেকে উইঘুর মুসলিম ও অন্যান্য জাতিগত সংখ্যালঘুদের ন্যায্য দাবিকে সমর্থন করার জন্য ঘুলজা গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।”

    বিশিষ্ট ভাস্কর্য শিল্পী রাশা বলেন, “জাতিসংঘের একটি কমিটি জানতে পেরেছে যে, ১০ লাখের মতো উইঘুর মুসলিমকে পশ্চিমাঞ্চলীয় শিনজিয়াং অঞ্চলে কয়েকটি শিবিরে বন্দী করে রাখা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এসব ক্যাম্পে তাদের ‘নতুন করে শিক্ষা’ দেয়া হচ্ছে। বিবিসি জানিয়েছে, একইসঙ্গে শিনজিয়াং প্রদেশে বসবাসকারী লোকজনের ওপর চীন সরকারের নিপীড়নমূলক নজরদারির তথ্যপ্রমাণ ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। গত কয়েক দশকে সংখ্যাগুরু চীনা হান জাতির বহু মানুষ শিনজিয়াং অঞ্চলে গেছেন সেখানে বসবাস করতে। উইঘুর সম্প্রদায়ের লোকজন মনে করছেন এর ফলে তাদের সংস্কৃতি ও জীবনযাপন হুমকির মুখে পড়েছে। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, যেসব লোকজনের ২৬টি তথাকথিত ‘স্পর্শকাতর দেশের’ আত্মীয়স্বজন আছেন তাদের এসব ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, কাজাখস্তান এবং তুরস্কসহ আরো কিছু দেশ। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, এছাড়াও যারা মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বিদেশের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তাদের টার্গেট করেছে কর্তৃপক্ষ। মানবাধিকার সংগঠনগুলো আরো বলছে, এসব ক্যাম্পে যাদের রাখা হয়েছে তাদের চীনা ম্যান্ডারিন ভাষা শেখানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের অনুগত থাকতে। আরো বলা হচ্ছে, তাদের নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাসের সমালোচনা করতে অথবা সেই ধর্ম পরিত্যাগ করতে। ওমির নামে তাদের একজন বলেছেন, ‘তারা আমাদের ঘুমাতে দেয়নি। কয়েক ঘণ্টা ধরে আমাকে ঝুলিয়ে রেখে পেটানো হতো। কাঠ ও রবারের লাঠি দিয়ে পেটাতো। তার দিয়ে বানানো হতো চাবুক। সুই দিয়ে শরীরে ফুটানো হতো। পস্নাইয়ার দিয়ে তুলে নেয়া হতো নখ। এ সময় অন্যরা যে ভয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করত সেটাও আমি শুনতে পেতাম।’ জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান মিশেল ব্যাশেলেটও দাবি জানিয়েছেন শিনজিয়াংয়ের পরিস্থিতি দেখতে পর্যবেক্ষকদের সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার জন্য। কিন্তু চীন সরকার কোন অনুমতি দিচ্ছে না যা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী ও পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে চাইনিজ অস্ত্র সরবরাহকারী চীন এখনো স্বাধীন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানাবিধ ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। বিএনপি-জামাতের শাসনামলে ১৫ আগস্টে খালেদা জিয়াকে জন্মদিনের উপহার পাঠিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা করেছিল ঢাকাস্থ চীন দূতাবাস। চীন সরকার কর্তৃক উইঘুর মুসলিম নির্যাতন ও উন্নয়নশীল দেশে আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে। চট্টগ্রামে শ্রমিক নির্যাতন ও উত্তরায় অবহেলাজনিত কারণে মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত চায়না কোম্পানিগুলোর বিচার করতে হবে। বাংলাদেশে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে জনগণের টাকার অপচয় ও শ্রমিক নির্যাতন করার অপরাধে চীনা কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। অবিলম্বে চীনের সংখ্যালঘু উইঘুরদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় খুব শীঘ্রই বাংলাদেশে অবস্থিত চীন দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচী পালন করবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।”